অসহায় মানুষকে খাবার খাওয়ানো
August 26, 2024অসহায় মানুষকে খাবার খাওয়ানো বা দুস্থ মানুষের সহায়তা এমন আমল যার দ্বারা সহজেই জান্নাতে যাওয়া যায়। কিন্তু এই সহায়তা বা দান সদকা হতে হবে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে। মহান আল্লাহর দরবারে ইখলাস বিহীন দান সদকার কোনো মূল্য নেই। সামান্য দান অনুদানও যদি আল্লাহর জন্য হয়,
তাহলে তা দানকারীর নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে। রিয়াকারি বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্য হলে ওহুদ পাহাড় সমান বড় আমলও নষ্ট হয়ে যায়। সওয়াবের বদলে গুনাহের বোঝা বহন করতে হবে তখন। এ জন্যই আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন, তোমরা যদি দরিদ্রদেরকে গোপনে দান করো তবে এটিই তোমাদের জন্য উত্তম [সুরা বাকারা আয়াত:২৭১] ।
অবশ্য কখনও প্রকাশ্যে দান করার প্রয়োজন হয়। যখন প্রকাশ্যে দান করার বিশেষ উপকারিতা থাকে। যদি প্রকাশ্য দানের দ্বারা অন্য বিত্তবানরা দানে উৎসাহিত হয়। তখন অন্যদের উৎসাহিত করতে সবার সামনে দান করা যায়। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় গোপনে দান করাই উত্তম।
গোপনে দান করার দুটি বড় উপকারিতা রয়েছে। প্রথম হচ্ছে, রিয়াকারী থেকে বাঁচা সহজ হয়। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, দান গ্রহীতাকে লজ্জা থেকে বাঁচানো। এমন সহায়তা সুখকর হতে পারে না, যার জন্য ব্যক্তির আত্মমর্যাদা বিনষ্ট হয়।
অনেক সময় এমন সহায়তা দান গ্রহীতার গলার হাড় হয়ে যায়।
বর্তমানে অনেক মানুষকে দেখা যায়,তারা অসহায় মানুষের সেবার নামে নিজেদের প্রচারণা করে চলেছেন। সেবার জন্য না হয়ে সেবা হয়ে গেছে বিপণনের মাধ্যম। সামাজিক সুনাম সুখ্যাতি অর্জনের জন্য সেবামূলক সংগঠন গড়ে তোলা হচ্ছে।
ত্রাণ গ্রহীতাদের ছবি তোলা ভিডিও বানানো ছাড়া ত্রাণ বিতরণ করা হয় না |
এ ক্ষেত্রে যে মৌলিক কথাটি মনে রাখতে হবে সেটি হচ্ছে, এমন ভাবে কোনো ত্রাণ বিতরণ করা যাবে না, যা অনুদান গ্রহীতাদের মনঃকষ্টের কারণ হয়। একান্ত বাধ্য হয়ে তারা ত্রাণ নিতে আসেন । তাদের অনেকেই আছেন যারা তাদের সদকা গ্রহণের ছবি ভাইরাল হওয়া পছন্দ করেন না।
তাদের মানসিকতার দিকে খেয়াল রাখা একান্ত আবশ্যক। মানবিকতার ছোঁয়া থাকা উচিত মানবিক সহায়তার প্রতিটি ইভেন্টে।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, গোপনে দান করার সওয়াব নিঃসন্দেহে প্রকাশ্যে দানের দ্বারা অর্জিত হয় না। গোপন দানের অনেক ফজিলতের কথা রয়েছে প্রিয় নবীর হাদিসে।
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও দুস্থদের পাশে দাঁড়ানো শুধু সামাজিক দায়িত্বই নয়, এটা একজন মুসলিমের ধর্মীয় দায়িত্বও বটে। আর সে-ই প্রকৃত মানুষ, যে বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসে।
আজকে ফেনীতে ত্রাণ নিতে এসে একজন আঙ্কেল রাগ করে ত্রাণ না নিয়েই চলে গেছেন। কারণ ছিল ত্রাণ দেয়ার সময় ভিডিও/ছবি তোলা।
ওনি একপর্যায়ে বললেন-বাবা, টাকাপয়সা আমাদেরও বহু ছিল। একটা বড় খামারের মালিকও ছিলাম। বন্যায় সব শেষ। বছরে হাজার হাজার টাকার যাকাত দিছি।
কিন্তু আজকে বন্যার কারণে নিঃস্ব। পরিবার আর বাচ্চাদের দিকে তাকাইয়া ত্রাণ নিতে আসছি। সবাই যে ভিডিও করে অনলাইনে দিচ্ছে এইগুলা তো সারাজীবন থাইকা যায়। পরে দেখলে নিজেরে অসহায় মনে হয়। আমাদেরও তো চক্ষুলজ্জা আছে।
তাই দয়া করে যারা ত্রাণ দিচ্ছেন অন্তত ত্রাণ দেয়ার সময় ভিডিও/ছবি তুলবেন না। ত্রাণ নিতে আসা অনেকেই বহু টাকার মালিক ছিল কিন্তু আজকে পরিস্থিতির শিকার।
মানুষকে সহযোগিতা করার সময় ছবি না তোলাই উত্তম।
আসলে মানুষ পরিবর্তনশীল। পরিবর্তন হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সময়। কারণ সময়ের সাথে সবাই পরিবর্তন হয়। এজন্য বলেছি আজকে যে রাজা, কালকে সে ফকির, এটা পুরোটাই ঘড়ির। অর্থাৎ সময় বলে দিবে আমার কর্ম। আজ আমি যদি ভালো মানুষ হয়ে বেঁচে থাকে তাহলে ঘড়ি আমাকে তার মূল্যায়ন করবে। আজ আমি একজন মানুষের উপকার করলে, আমার বিপদে ঘড়ি এগিয়ে আসবে। কারণ সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময়কে খুঁজে পাই ওই মানুষগুলো , যে মানুষগুলো অন্য মানুষের জন্য কিছু করেছে।
অহংকার মিশে যাবে মাটিতে, ছাই হয়ে যাবে শরীর। আজ যে রাজা , কাল সে ফকির, পুরো খেলাটাই ঘড়ির।